ঢাকা,বুধবার, ১ মে ২০২৪

আলীকদমে কলেজ বাস্তবায়নকল্পে মতবিনিময় সভা ১০ জুলাই

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম ::

অবশেষে আলীকদমবাসীর স্বপ্নের কলেজ বাস্তবায়নে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইবের আহ্বানের অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় কলেজ বাস্তবায়নে আহ্বায়ক কমিটি গঠন, কলেজের জন্য জমি দানপত্র গ্রহণ এবং স্থাপনা নির্মাণসহ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) জাবের মোঃ সোয়াইব এর স্বাক্ষরিত গত ৩ জুলাইয়ের ৫৫৫ নম্বার স্মারকের পত্রে ‘আলীকদম উপজেলায় কলেজ স্থাপন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা’ আহ্বান করা হয়েছে।

এ পত্রে বলা হয়, ‘বান্দরবান পার্বত্য জেলার দুর্গম ও পশ্চাৎপদ আলীকদম উপজেলায় কোন সরকারি কলেজ না থাকায় কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী ১০ জুলাই ২০২৩ রোজ সোমবার বেলা ১২ টায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দেওয়ার জন্য তিনি সচেতন আলীকদমবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন ইউএনও জাবের মোঃ সোয়াইব।

জানা গেছে, পাকিস্তান আমলের ষাটের দশকে ৮৮৮.৭৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বৃহত্তর আলীকদম এলাকাকে মৌলিক ইউনিয়ন ঘোষণা করেন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। এই সময় ‘মৌলিক আলীকদম ইউনিয়ন’ এর সীমানা ছিল উত্তরে বর্তমান লামা থানা, দক্ষিণে- মিয়ানমার সীমান্ত, পূর্বে- থানচি উপজেলা এবং পশ্চিমে- লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। বর্তমান লামা ইউনিয়ন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন এবং পুরো আলীকদম উপজেলা মিলে সাবেক আলীকদম ইউনিয়নের আয়তন ছিলো বিশাল।

দেশ স্বাধীনের প্রায় দশ বছর পর ১৯৮২ ইং সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের ‘থানা প্রশাসন পূণর্বিন্যাস অধ্যাদেশ-১৯৮২ এর অনুবলে প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণ কর্মসূচীর আওতায় ‘আলীকদম’ কে প্রথম শ্রেণীর ‘মানোন্নিত থানা’ ঘোষণা করা হয়। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল হলে ‘থানা’ থেকে ‘উপজেলা’য় রূপান্তর হয় আলীকদম।

উল্লেখ্য, আলীকদম ইউনিয়ন থাকাকালে ১৯৬৫ সাল থেকে বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এরপর ১৯৭৬ সালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাফর চৌধুরীর নেতৃত্বে আলীকদম উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯৭৮ সালে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আলীকদম ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা পায়। পরবর্তীতে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা সদরে মৈত্রী উচ্চ বিদ্যালয়, আলীকদম আইডিয়াল স্কুল, সেন্টমেরিস স্কুল, অন্বেষা কলেজিয়েট স্কুলসহ একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেলেও কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ পিছিয়ে থাকে।

এদিকে, ১৯৮২ সালের পর থেকে স্থানীয় নেতৃত্বেও পালাবদল হলেও অদূরদর্শী জনপ্রতিনিধি ও জনকল্যাণমূখী নেতৃত্ব গড়ে না উঠার কারণে আলীকদম উপজেলায় ‘কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।

২০১৯-’২০ সালের দিকে আলীকদম সরকারি কলেজ স্থাপনে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রশাসনিক ও স্থানীয় নেতৃত্বের চরম উদাসীনতা ও ব্যর্থতার কারণে কলেজ স্থাপনের কাজ থেমে থাকে।

সম্প্রতি চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে অনুষ্ঠেয় একটি অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্বকে দোষারূপ করেন। এরপর আলীকদমে কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে জমি দান করতে আগ্রহ দেখান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, হাজী আবুল কাশেম (প্রকাশ সাতাকাইন্না হাজী) ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাফরের বড় ছেলে আদনান রামীম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তারাবুনিয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ও হাজী আবুল কাশেমের জমিতে কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে জমি দান গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অংশেথোয়াই মার্মা জানান, কলেজ বাস্তবায়নে স্থানীয় তরুণ নেতৃবৃন্ধকে সাথে নিয়ে কমিটি গঠন করা হলে কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে। কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আলীকমের সচেতন তরুণ সমাজ ও তরুণ নেতৃত্বের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলাপকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব জানিয়েছিলেন, উপজেলা পরিষদ হলরূমে একটি সভা আহ্বানের মাধ্যমে কলেজ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন ও জমি দানপত্র গ্রহণ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: